৩৯ টি বাংলা হাসির ও মজার জোকস Bangla Funny Status Quotes

৩৯ টি বাংলা হাসির ও মজার জোকস Bangla Funny Status Quotes

 

Hasir Golpo Bangla

১. হোজ্জা এক বিধবাকে বিয়ে করলেন, বিয়ের পাঁচ দিন পর নতুন বউ একটি ছেলেসন্তান জন্ম দিল। হোজ্জা তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে বাজারে গিয়ে স্কুলের ব্যাগ, বই থেকে শুরু করে সব কিনতে শুরু করলেন। মানুষজন তাঁকে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি এসব কিনছেন কেন?’

জবাবে হোজ্জা বললেন, ‘আমার বাচ্চা যদি নয় মাসের সফর পাঁচ দিনে শেষ করতে পারে, তাহলে তো সে স্কুলে যাওয়ার জন্য যেকোনো সময় প্রস্তুত হতে পারে।’

২.হোজ্জা একটা স্টল খুলে ওখানে নোটিশ টাঙিয়ে দিলেন।‘যেকোনো বিষয়ে দুই প্রশ্নের জবাবের বিনিময়ে পাঁচ পাউন্ড।’

একজন পথচারী হন্তদন্ত হয়ে তাঁর কাছে এসে টাকাটা হাতে দিয়ে বলল, 

‘দুটো প্রশ্নের জন্য পাঁচ পাউন্ড, একটু বেশি নয় কি?’

‘হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন’, 

হোজ্জা বললেন, ‘এর পরের প্রশ্ন?’

 

৩.রাজার মেজাজ খারাপ।রাজপ্রাসাদ থেকে বেরিয়ে শিকারে যাওয়ার পথে হোজ্জা সামনে পড়ে গেলেন।শিকারে যাওয়ার পথে হোজ্জার সামনে পড়ে যাওয়াটা আমার ভাগ্যের জন্য খারাপ, প্রহরীদের রাগত গলায় বললেন রাজা।আমার দিকে ওকে তাকাতে দিয়ো না-চাবুক পেটা করে ওকে পথ থেকে সরিয়ে দাও। 

প্রহরীরা তা-ই করল। 

শিকার কিন্তু ভালোই হলো। 

রাজা হোজ্জাকে ডেকে পাঠালেন। 

আমি সত্যি দুঃখিত, হোজ্জা।ভেবেছিলাম তুমি অশুভ।কিন্তু তুমি তা নও। 

আপনি ভেবেছিলেন আমি অশুভ!হোজ্জা বললেন। 

 আপনি আমাকে দেখার পর ভালো শিকার করেছেন।আর আমি আপনাকে দেখে চাবুক পেটা খেয়েছি।কে যে কার অশুভ, বুঝলাম না।

৪.হাটবারের দিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে জড়বুদ্ধির মতো আচরণ করতেন হোজ্জা, ফলে নির্বোধ ভেবে মানুষ তাকে মুদ্রা দান করত। কিন্তু তার সামনে দুটি মুদ্রা তুলে ধরা হলে, সর্বদাই তিনি ছোট মুদ্রাটি গ্রহণ করতেন, যতবারই, যেভাবেই দেয়া হোক না কেন।একদিন সদাশয় এক ব্যক্তি তাকে বললেন, ‘নাসিরুদ্দীন, তুমি তো বড় মুদ্রাটা নিতে পার। এতে তোমার দ্রুত বেশ কিছু টাকা-পয়সা জমে যাবে আর মানুষও আগের মতো তোমাকে নিয়ে তামাশা করতে পারবে না।”হুমম, আপনি যা বলছেন তা হয়তো ঠিক হতে পারে। কিন্তু আমি ভাবছি, আমি যদি সবসময় বড় মুদ্রাটা গ্রহণ করি, তাহলে মানুষ আমাকে তাদের চেয়েও নির্বোধ ভেবে যে আনন্দটা পায়, সে আনন্দটা আর পাবে না, ফলে দান হয়তো একেবারেই বন্ধ করে দিবে।’ হোজ্জা জবাব দেন।

‘আমি যখন মরুভূমিতে ছিলাম,’ এক স্মৃতিচারণায় বললেন হোজ্জা, ‘তখন রক্তলোলুপ, নৃশংস একদল বেদুইনকে দৌঁড়িয়েছিলাম।’

‘খালি হাতে!’ বিস্ময়ে প্রশ্ন করে দর্শক।’হ্যাঁ, কেবল ছোট একটা লাঠি ছিল আমার হাতে।’

‘কিন্তু এ কীভাবে সম্ভব, হোজ্জা!’

‘খুবই সহজ। আমি ঝড়ের বেগে দৌঁড়াচ্ছিলাম, আর তারাও আমার পেছন পেছন দৌঁড়াচ্ছিল।’

৫. একদিন হোজ্জা তার প্রিয় গাধার পিঠে লবণ বোঝাই করে বাজারের দিকে রওনা দিলেন। পথে একটা নদী পড়ল।গাধাসহ নদী পার হলেন।কিন্তু নদীর পানিতে লবণ গলে একাকার।পণ্য হারিয়ে হোজ্জা বিরক্ত।গাধা তো মহা খুশি বোঝা থেকে বেঁচে গিয়ে।

এর পরেরবারও হোজ্জা ওই পথ দিয়ে গেলেন, তবে এবার তুলা বোঝাই করে।গাধা যখন নদী পার হলো তখন তুলা ভিজে ওজন বেড়ে গেল।গাধা ওজনদার মাল নিয়ে টলমল পায়ে এগিয়ে যেতে লাগল।

হাহ্! হোজ্জা চেঁচিয়ে বললেন, কেমন জব্দ! ভেবেছিলি প্রতিবার পানি দিয়ে গেলে পিঠের ওপরের মালের ওজন কমে যাবে, তাই না?

৬. একদিন হোজ্জার স্ত্রী খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং চিকিৎসক ডাকতে বলেন।হোজ্জা তাঁর স্ত্রীর অসুস্থতা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লেন।তিনি ছুটে গেলেন চিকিৎসক ডেকে আনার জন্য।কিন্তু রাস্তার দিকের জানালার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় স্ত্রী জানালা দিয়ে গলা বের করে চেঁচিয়ে বললেন, আল্লাহকে ধন্যবাদ! ব্যথাটা চলে গেছে, চিকিৎসকের দরকার নেই।হোজ্জা স্ত্রীর কথা শুনলেন এবং চিকিৎসকের বাড়ির দিকে দৌড়ে গেলেন।বললেন, ডাক্তার, আমার স্ত্রী খুব অসুস্থ ছিল এবং আপনাকে ডেকে আনার জন্য বলেছিল।কিন্তু আপনাকে ডেকে আনতে বের হওয়ার সময় বলল সে সুস্থ বোধ করছে, আপনাকে ডাকার দরকার নেই।তাই আপনাকে পুরো ব্যাপারটা বলতে এলাম এই জন্য যে তাকে দেখতে আসতে হবে না।

৭. বিবির পিড়াপিড়িতে নাসিরুদ্দিন হোজ্জা একটা গরু কিনল।কিন্তু গরু ও গাধার জন্য গোয়াল ঘরে পর্যাপ্ত যায়গা না থাকায়, একটা ঘুমালে আরেকটাকে দাড়িয়ে থাকতে হতো।প্রিয় গাধার এই দুরবস্থা দেখে হোজ্জা একদিন খোদার কাছে প্রার্থনা করছে:হে আল্লাহ, দয়া করে গরুটাকে মেরে ফেল যাতে আমার গাধাটা একটু আরাম করে ঘুমাইতে পারে পরদিন সকালে সে গোয়াল ঘরে গিয়ে দেখে যে গাধাটা মরে পরে আছে।প্রানপ্রিয় গাধার মৃত্যুতে দুঃখিত ও হতাশ হয়ে হোজ্জা বিরস বদনে আকাশের দিকে তাকায়ে 

বলল:কোন অভিযোগ করবনা, খোদা, কিন্তু তুমি এতদিন ধরে সারা দুনিয়ার মালিক হয়েও, কোনটা গরু কোনটা গাধা এইটা চিনলানা!

৮. একদিন হোজ্জা বাজার থেকে কলিজা কিনে বাসায় যাচ্ছিলেন।এদিকে তাঁর এক বন্ধু তাঁকে কলিজার পাই বানানোর রেসিপি দিয়েছিলেন, যাতে বাসায় গিয়ে কলিজার পাই রান্না করতে পারেন।কিন্তু হঠাৎ একটি বাজপাখি উড়ে এসে কলিজা ছিনিয়ে নিয়ে একেবারে নাগালের বাইরে উড়ে চলে গেল। বোকা কোথাকার!চেঁচিয়ে হোজ্জা বললেন, কলিজা নিয়ে গেছ ঠিক আছে, কিন্তু প্রস্তুত প্রণালী (রেসিপি )তো আমার কাছে!

৯. এক তুর্কির ষাঁড় হোজ্জার বাগানের বেড়া ভেঙে ভেতরে ঢুকে তছনছ করে দিয়ে মালিকের কাছে ফিরে গেল।হোজ্জা পুরো ব্যাপারটা লক্ষ করলেন, তারপর একটা বেত নিয়ে বেরিয়ে এসে ষাঁড়টাকে পেটাতে শুরু করলেন। কোন সাহসে আমার ষাঁড়কে আপনি পেটাচ্ছেন! তুর্কি চেঁচিয়ে বলল। কিছু মনে করবেন না আপনি, হোজ্জা বললেন, ও পুরো ব্যাপারটা জানে।এটা ওর আর আমার ব্যাপার!

১০. নাসিরুদ্দিন হোজ্জা তখন কাজী। বিচার আচার করেন। একদিন বিচারে বসেছেন। ফরিয়াদি আসামির সম্পর্কে তার অভিযোগের বয়ান দিতেছে। হোজ্জা মনযোগ দিয়া তার কথা শুনছেন। বাদীর বলা শেষ হয়ে মাথা ঝাকিয়ে বললেন, ‘তোমার কথাই ঠিক’।এইবার আসামি বলে উঠল, ‘হুজুর, আমার দুইটা কথা ছিল’। হোজ্জা বললেন, ‘ঠিকাছে তুমি তোমার বক্তব্য বল’। আসামির বক্তব্যও মনযোগ দিয়া শোনার পর হোজ্জা বললেন, ‘তোমার কথাই ঠিক’।হোজ্জার স্ত্রী পর্দার আড়ালে এতক্ষণ সব কথা শুনছিলেন 

 বিরক্ত হয়ে স্বামীকে তিনি বললেন, ‘দুইজনই ঠিক হয় কিভাবে? হয় আসামির কথা ঠিক অথবা ফরিয়াদির কথা ঠিক’।  হোজ্জা স্ত্রীর দিকে ফিরে সমর্থনসূচক হাসি দিয়ে বললেন, ‘বিবি তোমার কথাই ঠিক’।

১১. একদিন রাতে হোজ্জার প্রতিবেশি শুনল হোজ্জার সাথে তার স্ত্রীর ঝগড়া চলছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর ভারী একটা কিছু পড়ার আওয়াজ হলো তারপর সব চুপচাপ।

পরদিন সকালে প্রতিবেশি হোজ্জা কে জিজ্ঞাস করে, ‘কাল রাতে আপনার বাসায় ভারী কিছু একটা পড়ার শব্দ পেলাম’।

‘আমার বিবি রাগ করে আমার কোর্তা জানালা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়’, হোজ্জা জানায়’একটা কোর্তা পড়ায় এত শব্দ হয়’, প্রতিবেশি অবাক’আরে কোর্তার ভিতর তো আমিও ছিলাম’, হোজ্জা বিরস মুখে জানায়।

ফেসবুক ফানি ক্যাপশন বাংলা Bangla Funny Status Captions For Facebook

একদিন একজন পুরুষ ও একজন মহিলা বিচারক হোজ্জার দরবারে এল।

মহিলাটি ফরিয়াদ জানায়, ‘আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, অপরিচিত এই লোকটা হঠাৎ এসে আমাকে চুমু দিয়েছে। আমি বিচার চাই’।

‘আমিও মনে করি তোমার বিচার পাওয়া উচিত’, হোজ্জা বলে। ‘সুতরাং আমি নির্দেশ দিলাম, তুমি লোকটাকে চুমু দাও এবং তোমার প্রতিশোধ নাও’।

১২. একদিন নাসিরউদ্দিন চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল।

তার শালা এসে জিজ্ঞাস করে, ‘ আপনি কি ঘুমাচ্ছেন?’

‘কেন জিজ্ঞাস করছ’, নাসিরুদ্দিন বলে।

‘আমি ভাবছিলাম আপনি যদি আমাকে কিছু টাকা ধার দিতেন’।

‘ওকে, তাইলে তোমার প্রথম প্রশ্নের উত্তর, আমি ঘুমাচ্ছি’, নাসিরউদ্দিন বলে। ‘ এখন আমাকে একা থাকতে দেও’

১৩. এক রাতে হোজ্জা দেখে বাগানে এক লোক দাড়ায় আছে। চোর ভেবে হোজ্জা ধনুক বের করে চোরের দিকে তীর ছুড়ল। পরদিন সকালে গিয়ে দেখে তারই জামা মেলে দেয়া ছিল। যেটাকে হোজ্জা চোর মনে করে তীর ছুড়েছিল এবং সেই তীর জামাতে বিদ্ধ হয়ে আছে।

সাথে সাথে হোজ্জা মোনাজাত করে আল্লার কাছে শুকরিয়া জানায়।

হোজ্জার বিবি অবাক হয়ে বলে, ‘ তুমি এখন মোনাজাত করছ কেন?’

‘ভাগ্যিস জামার ভিতর আমি ছিলামনা’, হোজ্জার উত্তর।

১৪. হোজ্জা এক বিধবাকে বিয়ে করলেন, বিয়ের পাঁচ দিন পর নতুন বউ একটি ছেলেসন্তান জন্ম দিল। হোজ্জা তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে বাজারে গিয়ে স্কুলের ব্যাগ, বই থেকে শুরু করে সব কিনতে শুরু করলেন। মানুষজন তাঁকে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি এসব কিনছেন কেন?’

জবাবে হোজ্জা বললেন, ‘আমার বাচ্চা যদি নয় মাসের সফর পাঁচ দিনে শেষ করতে পারে, তাহলে তো সে স্কুলে যাওয়ার জন্য যেকোনো সময় প্রস্তুত হতে পারে।’

 

১৫. হোজ্জার এক প্রতিবেশী শিকারে গিয়ে নেকড়ের কবল থেকে এক ভেড়াকে বাঁচিয়ে বাড়ি নিয়ে আসে, পালবে বলে। শিকারির যত্নে ভেড়াটি দিন দিন নাদুস-নুদুস হয়ে উঠল। একদিন শিকারির লোভ হলো ভেড়ার মাংস খাওয়ার জন্য। তাই জবাই করতে উদ্যত হতেই ভেড়াটি ভয়ে বিকট শব্দে চিত্কার জুড়ে ছিল। ভেড়ার চিত্কারে হোজ্জার ঘুম গেল ভেঙে। ব্যাপারটা বোঝার জন্য সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবেশীর বাড়িতে ছুটে গেলেন হোজ্জা।

হোজ্জাকে দেখে শিকারি প্রতিবেশী লজ্জিত গলায় বললেন, ‘এই ভেড়াটার প্রাণ বাঁচিয়ে ছিলাম একবার।’

‘তাহলে ও তোমাকে গালি দিচ্ছে কেন?’

‘গালি দিচ্ছে?’

‘ভেড়া বলছে, “তুমি একটা নেকড়ে”।’ –

১৬. গোধূলি বেলায় নির্জন মরুপথে একাকি হাঁটতে হাঁটতে হোজ্জা দেখলেন ধূলিঝড় উঠিয়ে একদল ঘোড়সওয়ার আসছে তার দিকে। চিন্তার ঝড় খেলতে লাগল তাঁর মনে, কল্পনায় তিনি নিজেকে দেখতে লাগলেন বন্দী, ডাকাতির শিকার কিংবা নিহত অবস্থায়। উৎকণ্ঠায় হৃদপিণ্ড তাঁর গলায় উঠে আসার উপক্রম হলো। দ্রুত এক কবরস্থানের দেয়ালে বেয়ে অন্যপাশে চলে গেলেন তিনি, তারপর খোলা এক কবরে মরার মতো পড়ে রইলেন।তার এই অদ্ভুত ব্যবহার লক্ষ করল ঘোড় সওয়ারগণ এবং অনুসরণ করে তার কাছে এসে পড়ল। হোজ্জা তখন ভয়ে কাঁপছেন।’এই কবরে আপনি কী করছেন? আমরা দেখলাম আপনি দৌঁড়ে চলে গেলেন। আমরা কি কোনো সাহায্য করতে পারি আপনার?’ কোমল গলায় দলনেতা জানতে চান।’আপনি একটি প্রশ্ন করেছেন, তার মানে এই নয় যে এর সরল-সোজা কোনো উত্তর আছে।’ বিপদ কেটে গেছে বুঝতে পেরে হোজ্জা বলতে লাগলেন। ‘ আসলে ব্যাপারটি নির্ভর করে দৃষ্টিভঙ্গির উপর। আর যদি সত্যি সত্যি জানতে চান, তাহলে বলি, আমি এখানে এসেছি আপনাদের কারণে, আর আপনারা এখানে এসেছেন আমার কারণে।’

১৭. একদা মোল্লা নাসিরউদ্দিন হোজ্জা তার নিজের জন্য একটি জোব্বা কিনতে গেলেন একটি দোকানে। তো পছন্দ করার পর দোকানী জোব্বা’টা প্যাক করে দেয়। মোল্লা তখন জোব্বা নিয়ে চলে আসার সময় ভাবলেন জোব্বা না নিয়ে বরং একটি আলখাল্লা নিয়ে যাই। দোকানীকে বললেন, আপনি বরং আমাকে একটি আলখাল্লা দিন। তো দোকানী আলখাল্লা দেয়ার পর মোল্লা নাসিরউদ্দিন তা নিয়ে বের হয়ে আসার সময় দোকানী ডেকে বললেন, হোজ্জা সাহেব আপনিতো আলখাল্লা’র মূল্য পরিশোধ করেননি। তখন মোল্লা উত্তর দিল আমি তো আলখাল্লা’র পরিবর্তে জোব্বা’টা রেখে গেলাম। তখন দোকানী বললেন, আপনিতো জোব্বা’র জন্যও মূল্য পরিশোধ করেননি। প্রতি উত্তরে মোল্লা বললেন, যেটা আমি নেইনি তার জন্য মূল্য পরিশোধ করব কেন।

১৮. নাসিরুদ্দিন হোজ্জা নিজের বাগানে মাটি খুড়ছিলেন। একজন প্রতিবেশি এসে জিজ্ঞেস করল, ও মোল্লাসাব, মাটি খোড়েন কেন ?

হোজ্জা বললেন, রাস্তায় একটা গর্ত হয়েছে। ওটা ভরাট করব।

লোকটা জিজ্ঞেস করল, আর এখানে যে গর্ত হবে সেটা ?

হোজ্জা বললেন, আরেক যায়গা থেকে মাটি এনে ফেলব।

১৯. নাসিরুদ্দিন হোজ্জার বাড়িতে তাঁর কিছু বন্ধু এসেছেন। অতিথিদের তরমুজ দিয়ে আপ্যায়ন করলেন হোজ্জা। বন্ধুদেরসঙ্গে খেতে বসলেন হোজ্জা নিজেও।

হোজ্জার পাশেই বসেছিলেন তাঁর এক দুষ্টু বন্ধু। তরমুজ খেয়ে খেয়ে বন্ধুটি হোজ্জার সামনে তরমুজের খোসা রাখছিলেন। খাওয়া শেষে দেখা গেল, হোজ্জার সামনে তরমুজের খোসার স্তূপ।

দুষ্টু বন্ধুটি অন্যদের বললেন, ‘দেখেছেন কাণ্ড? হোজ্জা কেমন পেটুক? তার সামনে তরমুজের খোসার স্তূপ হয়ে গেছে’!

হোজ্জা হেসে বললেন, ‘আর আমার বন্ধুটির সামনে দেখছি একটা খোসাও নেই! উনি খোসাশুদ্ধ খেয়েছেন! এখন আপনারাই বলুন,কে বেশি পেটুক!’

২০. ছোটবেলা গোপাল ভাঁড় কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলে বুড়োরা তাকে ক্ষেপাত আর হাসত, ‘গোপাল, এর পর তোমার পালা।’শুনে গোপালের খুব রাগ হত। বুড়োদের কিভাবে জব্দ করা যায়, সেই পথ খুঁজতে লাগল এবং এক সময় পেয়ে গেল। শবদাহ আর শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে গিয়ে ঐসব বুড়োদের বলতে লাগল,‘এর পর তোমার পালা!’

২১. গোপাল ভাঁড় একবার তার ছেলেকে নিয়ে মেলায় বেড়াতে গিয়ে ছেলেকে হারিয়ে ফেলে।  

ছেলে তখন একটুও না ঘাবড়ে ‘গোপাল, গোপাল’ বলে চেঁচাতে থাকে। ছেলের চিৎকার শুনে গোপাল ছুটে এসে ধমক দেয় 

ছেলেকে, ‘ছিঃ ছিঃ, আমার নাম ধরে ডাকছিস,বাবা বলেডাকতে পারিস না?’

ছেলে তখন বলল, ‘হুঁ, বাবা বলে ডাকি আর মেলার সব লোক ছুটে আসুক!’

২২. একদিন সকালে রাজা কৃ্ষ্ণচন্দ্র মজুমদার প্রাতঃ ভ্রমনে বের হলেন গোপাল ভাড়কে নিয়ে।গোপাল তামাক খাচ্ছিলো দেখে রাজা খুবই বিরক্ত হলেন।পথে দেখলেন,তামাক বাগানে একটা গাধা আগাছা খাচ্ছে,কিন্তু তামাক পাতায় মুখও দিচ্ছেনা। রাজা গোপালকে বললেন,’দেখেছো হে গোপাল,গাধা ঘাস খায় ঠিকই,কিন্তু তামাক মুখেও নেয়না।’ হেসে গোপাল বলে,’রাজামশাই ঠিকই বলেছেন।কেবল গাধারাই তামাক খায়না’

 

২৩. গোপালের তখন বয়স হয়েছে। চোখে ভালো দেখতে পারে না। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র বললেন, কী গোপাল, গতকাল আসনি কেন? আজ্ঞে চোখে সমস্যা হয়েছে। সবকিছু দুটো দেখি। কাল এসেছিলাম। এসে দেখি দুটো দরবার। কোনটায় ঢুকব, ভাবতে ভাবতেই। এ তো তোমার জন্য ভালোই হলো। তুমি বড়লোক হয়ে গেলে। আগে দেখতে তোমার একটা বলদ, এখন দেখবে দুটো বলদ। ঠিকই বলেছেন মহারাজ। আগে দেখতাম আপনার দুটো পা, এখন দেখছি চারটা পাঠিক আমার বলদের মতোই

২৪. একদিন গোপাল ভাঁড় রাজসভাতে ঢুকতেই মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র বললেন, ‘গোপাল তুমি এখন থেকে আমায় বেশ সম্মান করে চলবে ।  

তোমার আর আমার তফাত কত জানো’ ?

গোপাল চট করে তার আসন ছেড়ে উঠে মহারাজের আসন ও নিজের আসনের ব্যবধান মেপে বলল, ‘খুব বেশি তফাত নয় হুজুর,মাত্র দেড় হাত’ ।

২৫. বেড়াতে বেরিয়ে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র একবার গোপালের হাত চেপে ধরে আস্তে আস্তে মোচড়াতে লাগলেন।

গোপাল: আমার হাত নির্দোষ, ওকে রেহাই দিন।

রাজা: জোর করে ছাড়িয়ে নাও।

গোপাল: সেটা বেয়াদবি হবে।

রাজা: উহু, তাহলে হাত ছাড়ব না।

গোপাল তখন যে রোগের যে দাওয়াই বলে রাম নাম জপতে থাকলেন।

রাজা: এতে কি আর কাজ হবে? দাওয়াই কোথায়?

গোপাল: রাম নাম জপাই তো মোক্ষম দাওয়াই।

রাজা: মানে?

গোপাল: পিতামহ, প্রপিতামহের আমল থেকে শুনে আসছি, রাম নাম জপলে ভূত ছাড়ে।

রাজা গোপালের হাত ছেড়ে দিলেন সঙ্গে সঙ্গে।

২৬. গোপাল একবার গ্রামের মোড়ল হয়েছিল। তো একদিন ভোরবেলায় এক লোক এসে ডাকতে লাগল, ‘গোপাল? গোপাল?’ গোপাল ভাঁড় কোনো উত্তর না দিয়ে শুয়েই রইল। এবার লোকটা চিৎকার করে ডাকতে লাগল, ‘মোড়ল সাহেব, মোড়ল সাহেব।’ এবারও গোপাল কোনো কথা না বলে মটকা মেরে শুয়ে রইল। গোপালের বউ ছুটে এসে বলল, ‘কী ব্যাপার, লোকটা মোড়ল সাহেব মোড়ল সাহেব বলে চেঁচিয়ে পড়া মাত করছে, তুমি কিছুই বলছ না!’ গোপাল কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বলল, ‘আহা, ডাকুক না কিছুক্ষণ, পাড়ার লোকজন জানুক আমি মোড়ল হয়েছি।’

২৭. একটি লোকের কাছ থেকে গোপাল কিছু টাকা ধার নিয়েছিল ।লোকটার সাথে গোপালের দেখা হলেই-আজ দেব, কাল দেব-বলে গোপাল কাটিয়ে দিত  

 । একদিন লোকটা গোপালকে চেপে ধরলো । বললো, গোপাল ; আজ যদি টাকা না দিস ,তাহলে আমি তোর শ্রাদ্ধ করবো ।তখন গোপাল বললো -তাহলে তো ভালই হল ।  

আমার ছেলের বদলে না হয় আপনিই আমার শ্রাদ্ধ করবেন ।এতে ছেলের কিছু টাকা পয়সা বাঁচবে।

২৮. গোপাল আর গোপালের স্ত্রীর কথোপকথন-

গোপালের স্ত্রীঃ কি ব্যাপার? চশমা পরে ঘুমাচ্ছো কেন?

গোপালঃ জানোই তো চোখে ছানি পড়েছে। চশমা ছাড়া স্বপ্ন দেখবো কিভাবে?

২৯. গোপাল ভাঁড়ের ভাইপো আর তার স্ত্রীর মধ্যে ভীষণ ঝগড়া বেধেছে। মধ্যস্থতা করতে এগিয়ে গেলেন গোপাল। বললেন, বলি কী নিয়ে এত ঝগড়া হচ্ছে শুনি?গোপালের ভাইপো বলল, দেখুন তো কাকা, আমি আগামী বছর একটা দুধেল গাই কিনব বলেছি 

। আর আমার স্ত্রী বলছে, সে নাকি গাইয়ের দুধ দিয়ে পায়েস রাঁধবে।  

ভাইপোর স্ত্রীও সমান তেজে চেঁচিয়ে উঠল। 

দু হাত তুলে দুজনকে থামতে ইঙ্গিত করে বললেন গোপাল, আস্তে আস্তে! গাধা নাকি তোরা? দুজন একটু ঠান্ডা হলে গোপাল ভাইপোকে বললেন, আরে গাধা, তোর বউয়ের পায়েস রাঁধা তো পরের কথা। আমি যে বাড়ির পেছনে সবজির বাগান করেছি, সেসব যে তোর গরু খাবে, সে খেয়াল আছে?

৩০. গোপাল যাচ্ছে শ্বশুরবাড়ি। মাথার ওপর গনগনে সূর্য। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে গোপাল এক গাছের নিচে বিশ্রাম নিতে বসল। বেশি গরম লাগায় ফতুয়াটা খুলে পাশে রেখে একটু আয়েশ করে বসল। বসে বিশ্রাম নিতে নিতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল, নিজেই জানে না। ঘুম যখন ভাঙল গোপাল দেখে, তার ফতুয়াটা চুরি হয়ে গেছে। হায় হায়! এখন কী হবে! খালি গায়ে তো আর শ্বশুরবাড়ি ওঠা যায় না। কী আর করা। সে হাঁটতে হাঁটতে মনে মনে বলতে লাগল, ‘হে ভগবান, রাস্তায় অন্তত ১০টি মুদ্রা যেন কুড়িয়ে পাই, তাহলে পাঁচ মুদ্রায় আমার জন্য একটা ভালো ফতুয়া কিনতে পারি। আর তোমার জন্য পাঁচটি মুদ্রা মন্দিরে দান করতে পারি•••।’ আর কী আশ্চর্য! ভাবতে ভাবতেই দেখে, রাস্তার ধারে কয়েকটি মুদ্রা পড়ে আছে। খুশি হয়ে উঠল গোপাল, গুনে দেখে পাঁচটি মুদ্রা!

গোপাল স্বগত বলে উঠল, ‘হে ভগবান, আমাকে তোমার বিশ্বাস হলো না, নিজের ভাগটা আগেই রেখে দিলে?

৩১. একদিন এক প্রতিবেশী গোপাল ভাঁড়ের কাছে এসে :

‘আমাকে একটা চিঠি লিখে দাও।’

‘আমি চিঠি লিখতে পারবো না, আমার পায়ে ব্যথা।’ প্রতিবেশী আশ্চর্য হয়ে বললো, ‘চিঠি তো লিখবে হাত দিয়ে, পায়ে ব্যথা তাতে কী হয়েছে?’

‘কারণ আমি অতোদূর হেঁটে যেতে পারবো না।’

‘অতোদূর হাঁটতে পারবে না মানে?’

 

৩২. ‘মানে আমার লেখা চিঠি আমি ছাড়া আর কেউ পড়তে পারবে না। আমার হাতের লেখা খুব খারাপ তো। যাকে চিঠি পাঠাবে, তাকে তো আমাকেই পড়ে দিয়ে আসতে হবে, তাই না? পায়ে ব্যথা নিয়ে যাবো কিভাবে?’

৩৩. এক পাড় মাতাল রাস্তা দিয়ে যেতে যেত গোপালের বাড়ির রোয়াকে বসে হেড়ে গলায় গান জুড়ে দিল। গোপাল তার ছেলেদের ডেকে বললে, বেটাকে বেধে ঘা কতক দে তো। এপাধা নি ব্যাটাকে দে প্যাদানি।

মাতাল ফিক করে হেসে বলল কি বাওয়া। তোমারও কি নেশা হল নাকি? যা নয় তাই বলতে শুরু করলে। আমি কি মনের সুখে গান গাইতেও পারব ‍না বাওয়া। একি মগের মল্লুক না কি, যা বলবে তাই শুনতে হবে? আর বাঁধবে কেন ঠাকুর- আমি কি ভোগের চাল কলা ফল না কি?

গোপাল এই কথা শুনে না হেসে পারল না। গোপালের হাসি দেখে মাতাল গান ছেড়ে শুরু করল তখন তিড়িং বিড়িং নাচ। পাধা নি।

৩৪. গোপালের স্ত্রী নিজেই দেখাশোনা করে বড় মেয়েকে এক বামুনের বাড়িতে বিয়ে দিয়েছিল। সেই মেয়ের মেয়ে বড় হোল একদিন। তারই বিয়ের নিমন্তন্নে গোপালেরা উপস্থিত। স্ত্রী একান্তে ডেকে বললে, হ্যাঁ গা, আমাদের বড় মেয়ের জামাই নাকি জাতে নাপিত বামুন নয়। কিন্তু সে সম্বন্ধ তুমি কিছু জান কি? স্ত্রীর কথা শুনে গোপাল বললে, আর চেপে যাও- আমিও আসলে বামুন নই, আমি জাতিতে নাপিত। 

 তোমার বাপের কাছে জাত ভাঁড়িয়ে তোমাকে বিয়ে করেছি 

। তুমি জাতকুল হারালেও আমি মোটেই জাতকুল হারাইনি। জাতকুল আবার কি? ধন মানেই সব। যার ধন আছে সেই সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি। অতএব, এর জন্য তোমার ভাবনা চিন্তা করার কিছুই নেই 

। তুমিও হয়ত এই রকম কোন তাঁতির মেয়ে হবে।

৩৫. গোপাল একবার দূর দেশে বেড়াতে যাবে বহুদিন ভাড়াটে বাড়িতে রয়েছে, একে একে অনেক আসবাবপত্র জমা হয়েছে। সে সব আসবাব সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব, অথচ বেচে যেতেই ইচ্ছে নেই। হেকে পয়সা পাবে। বেচে গেলে টাকা পয়সা যা পাওয়া যাবে এখন, তাতে ফিরে এলে সে টাকায় তো আর খরিদ করা যাবে না, ভালো ভালো আসবাবপত্র প্রায় সব গোপাল সকলের কাছ থেকে দান হিসাবে পেয়েছে তা তো বেচা উচিত নয়। তাহলে লোক কি বলবে? তাই কি করা যায় এ কথাই বার বার ভাবছে। আবার আসবাবপত্র রেখে যাওয়ার জন্যে ওই ভাড়া বাড়িটা বজায় রাখার কোনো মানে হয় না। কারণ অনেক টাকা ভাড়া গুনতে হবে। ভেবে ভেবে অবশেষে একটা ফন্দী বের করলে। গোপাল একটা বড় বন্ধকী দোকানে আসবাবগুলো নিয়ে গিয়ে বন্ধক দিলে। অনেক টাকা দামের আসবাবগুলো নিয়ে গিয়ে বন্ধক দিলে মাত্র চারশো টাকায়। দোকানদার ওইসব আসবাব রেখে পাঁচ হাজার টাকাও দিতে রাজি ছিল। কিন্তু গোপাল ভাবল টাকার চেয়ে জিনিস রাখারই গরজ তার। যত কম টাকা নেওয়া যায়, সুদ টানতে হবে তত কম। সেজন্য হিসেব করে দেখলে- চারশো টাকার দরুন মাসে তার যে সুদ দিতে হবে, একটা ঘর ভাড়া করে জিনিসগুলো রেখে যেতে তাকে মাসে মাসে অনেক বেশি ভাড়া গুনতে হবে। গোপাল বেশ কিছুদিন পর ফিরে এসে টাকা দিয়ে আবার আসবাবগুলি ছাড়িয়ে নতুন ঘরে উঠল।

৩৬. রাজা কৃষ্ণচন্দ্র একবার পেয়াদাকে ডেকে বললেন, ওরে ভজহরি ব্যাপারীকে একবার ডেকে আনবি তো। ভজহরি সরেস গুড়ের কারবার করত। পেয়াদা ব্যাপারীকে একেবারে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাজসভায় হাজির করলে। ভজহরি গোপালকে ধারে মাল দিতে চাইত না, তাই তার ওপর গোপাল চটে ছিল। পেয়াদা তাকে আজ একেবারে রাজসভায় বেঁধে এনেছে বলে গোপাল মনে মনে বেশ খুশিই হল। বলল,- বেশ হয়েছে শালাকে বেধেই এনেছে।রাজা কিন্তু পেয়াদার ওপর চটে গিয়ে বললেন, আমি ভজহরিকে ডেকে আনতে বললুম, আর তুই কিনা একেবারে বেধে নিয়ে এলি? তোকে আমি বরখাস্ত করব 

 তোর বেশ বাড় হয়েছে, কেন তুই বেধে এনেছিস- আগে কৈফিয়ত দে, নয়তো এখনি তোকে বরখাসত করলাম। তোর কিছু বলার থাকে বল।পেয়াদা কাঁদতে কাঁদতে বলল, আর করব ‍না হুজুর।  

এবোরের মত বেয়াদপি মাপ করুন। নাহলে খেতে না পেয়ে মরে যাবো।  

গোপাল পেয়াদা পক্ষ নিয়ে ওকালতি করে মোলায়েম স্বরে বললে, হুজুর একে বরখাস্ত করবেন না- এ হচ্ছে জাত পেয়াদা,পেয়াদারা ধরে ‍  ,আনতে বললে বেধেই আনে – আর এ ডেকে আনতেই বলায় বেধে আনায় প্রকৃত পেয়াদার মতোই কাজ করেছে 

 যদি জাত পেয়াদা না হত সে কখনই বেঁধে আনত না। ক থাটা ঠিক কিনা এবার মহারাজ আপনি বিবেচনা করে দেখুন।গোপালের কথায় রাজা হেসে ফেললেন এবং অতি করিৎকর্মা পেয়াদাকে ক্ষমা করে দিলেন সেবারের মত। বললেন, এবারের মত অবশ্য মাপ করলাম, আর যেন কখনও এমন না হয় মনে রাখবি।

৩৭. রামবাবুর সাথে গল্প করতে করতে গোপালের খুব তেষ্টা পেয়েছে। সে ওর ভৃত্যকে ডেকে ঠাস ঠাস তিনটে চড় লাগিয়ে দিয়ে বলল, ‘যা এক ঘটি জল নিয়ে আয়! ঘটি যেন না ভাঙে।’ ব্যাপার দেখে রামবাবু বললেন, ‘গোপাল, ঘটি ভাঙার আগেই ওকে চড় মেরে বসলে যে?’ গোপাল জবাব দিলো, ‘আরে ভেঙে ফেলার পর মেরে কি আর লাভ আছে? এর চেয়ে আগেই মেরে দিলাম। সাবধান থাকবে।’

২৮. গোপাল একবার তার দুই বেয়াই-এর সাথে এক জায়গায় যাচ্ছিল। পথের ধারে দক্ষিণমুখো হয়ে সে প্রস্রাব করতে বসলে এক বেয়াই বলল, “আরে করেন কি, আপনি জানেন না, দিনের বেলা দক্ষিণমুখো হয়ে প্রস্রাব করতে নেই, শাস্ত্রে নিষেধ আছে যে!” অপর বেয়াই বলল, “শুনেছি উত্তরমুখো হয়েও নাকি ওই কাজটি করতে নেই।”

গোপাল বলল, “ওসব পন্ডিতলোকদের বচন, আমি গাঁইয়া মুখ্যুসুখ্যু মানুষ, ওসব বাছবিছার আমি করি না, সব মুখেই প্রস্রাব করি। বড় বেয়াই যে মুখে বললেন সে মুখে করি আর ছোট বেয়াই যে মুখে বললেন সে মুখেও করি।” গোপালের মুখের কথা শুনে বেয়াইদের মুখে আর কথা নেই।

৩৯. গোপাল একদিন পেটব্যথার যন্ত্রণায় ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিল, সে এক ভীষণ যন্ত্রণা। যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে সে রাজসভাতেই শুয়ে পড়ে বলতে লাগস- দোহাই মা কালী! আমার পেটের যন্ত্রণা কমিয়ে দাও মা, এ যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছি না। মা- মাগো, আমার যন্ত্রণা ভালো করে দাও- আমি সাত দিনের মধ্যে তোমার কাছে জোড়া পাঁঠা বলি দেব। কিছুক্ষণ পরে গোপালের যন্ত্রণার উপশম ঘটল, সে উঠে বসে একটা পান খেয়ে বলল- পেটের যন্ত্রণা তো এমনিতেই কমে যেত, এতে আর মা কালীর কেরামতি কোথায়? তবে আর মা কালীর কাছে জোড়া পাঁঠা বলি দিতে যাব কোন্ দুঃখে? গোপাল দিব্যি খোশ মেজাজে গল্প করতে লাগল। কিন্তু আবার কিছুক্ষণ পরে ভীষণ যন্ত্রণা শুরু হলো।  

গোপাল কাটা ছাগলের মতই দাপাতে দাপাতে বলল- ওমা, মা কালী, আমি কি আর তোমায় জোড়া পাঁঠা দিতাম না? আমি তো উপহাস করছিলাম 

 এত বোঝ মা, উপহাস বোঝ না?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *